দেশবিরোধী ভয়ানক তিন সাইবার দুর্বৃত্ত





মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া তিনজন ব্যক্তি। এসব ব্যক্তিদের নাম হলো দেশবিরোধী ও দিগ্‌ভ্রান্ত সাংবাদিক কথিত বুদ্ধিজীবী আবু রেজা আহমেদ, ফয়সল চৌধুরী সুয়েব এবং স্বঘোষিত 'অজ্ঞেয়বাদী' পিনাকী ভট্টাচার্য, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাস্তিক হিসেবে পরিচিত। এই তিনজনের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করে একজন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত অবস্থানে আছে এবং তারা পাগল শ্রেণির লোকের পর্যায়ে পড়ে। তাদের কর্মধর্ম হলো কুচিপূর্ণ গুজব ছড়ানো এবং মিথ্যাচার করা। তারা বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচারে আঘাত করে। তাঁদের নিজেদেরও তাদের পন্ডিতমনের অনুযায়ী, তারা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু পরিবার, বিএনপি চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বা রাজনৈতিক দলের সমালোচনা নয়, তারা সনাতন হিন্দু ধর্ম থেকে শুরু করে ইসলাম ধর্ম, কোরআন, আল্লাহ-খোদা বিষয়ে কোনও সমালোচনা বাদ দেয় না। তবে তাদের মধ্যে একটি সাধারণ মতামতের জায়গা আছে, যার সাথে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়া এবং দেশে জঙ্গিবাদের প্রসার করা। এই বিষয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, যে অনলাইনে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বিদেশে থেকে মিথ্যাচার প্রচার করলে তার কোন প্রভাব হয় না। তাই এই কথাটি তাদের নিজেদের মতামত অনুযায়ী বলেন। তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করা, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা, যুদ্ধাপরাধীদের দলে অপশক্তি এবং জঙ্গিবাদের পক্ষে জনসর্থন আদায় করা। কিছু মানুষ জানছেন যে, এদের কারো সঙ্গে আইএস এবং হিয়াবুত তাহরীর সম্পৃক্তও হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার পেইড এজেন্ট বলেও তাদের কেউকে সন্দেহ করা হচ্ছে।


রেজা আহমেদ ফয়সাল চৌধুরী সুয়েব হলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার পাঠলী ইউনিয়নের পাঠলী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পূর্বে চ্যানেল আই-তে অবস্থিত লন্ডনের ইউরোপ অফিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজ করতেন। তাঁকে দেশবিরোধী সাইবার অপরাধীর তালিকায় রাখা হয়েছে। চ্যানেল আই থেকে বাদ পড়ার পরেও তাঁর পরিচয় অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি বাংলাদেশে থাকার সময় ডা. আনোয়ারা আলী নামের একজন নারী চিকিত্সকের সাথে বিয়ে করেন। পরে লন্ডনে নিজের অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে বিয়ে করেন এবং এটি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক সমালোচনার কারণে হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত চরিত্রে অনিয়মিত স্বভাব ও স্ত্রীকে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে, যার ফলে দ্বিতীয় স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলেছেন। সুয়েব বর্তমানে লন্ডনের যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে বাস করছেন এবং 'চ্যানেল ইউরোপ' নামে একটি ভুঁইফোড় ফেসবুক পেজ চালাচ্ছেন। এই পেজে তিনি বাংলাদেশ সরকার, বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কাজ করেন।

চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষ তাকে চ্যানেল আই ইউরোপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চ্যানেল আইয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত আয়-ব্যয়ের হিসাব না দেওয়া, অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় চ্যালেন আইয়ের দায়িত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ চাকরি হারানোর পর আর্থিক সংকটে অস্থির সুয়েব সেলিব্রেটি হওয়ার আশায় বর্তমানে নিজে একটি ফেসবুক পেজ খুলে বসেছেন এবং সেখানে ‘স্ট্রেইট ডায়ালগ’ নামে একটি অনলাইন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। প্রায়ই নিজে নিজে লাইভে এসে বকবক করেন এই বাচাল। ভিউয়ার না থাকলেও সেগুলো ইউটিউব-ফেসবুকে ছড়িয়ে দেন লাইক-কমেন্ট পাওয়ার আশায়। এ ছাড়া তিনি কানাডার ভুঁইফোড় ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ নাগরিক টিভির নিয়মিত বিশ্লেষক। সরকার, প্রধানমন্ত্রী, শিল্পপতি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বিষোদ্্গার ও গুজব ছড়ানোই কথিত সাংবাদিক সুয়েবের মূল কাজ। তিনি মিথ্যাচার করে চলেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, এস আলম গ্রুপ, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস শরাফতসহ বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে ইচ্ছামাফিক বিষোদ্্গার করে যাচ্ছেন এই স্বঘোষিত পন্ডিত।

সুয়েব কনজারভেটিভ পার্টির হয়ে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদে নির্বাচন করে হাস্যকর সংখ্যায় ভোট পেয়ে পরাজিত হন। এর আগে তার প্রথম স্ত্রী ডা. আনোয়ারা আলী মেয়র পদে নির্বাচন করেন। সুয়েবের ‘স্ট্রেইট ডায়ালগ’ নামক অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নেন বিতর্কিত আইনজীবী ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন, এম রহমান মাসুম, টিটো রহমান, নাজমুস সাকিব সহ চিহ্নিত সাইবার অপরাধীরা।

সুয়েব সম্পর্কে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, ‘সুয়েব একটা টাউট ও বাজে লোক। তার কাছে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান কেউ ভালো নয়। মনে হয় বিশ্বে একমাত্র তিনিই সত্য মানুষ আর সব খারাপ। অথচ অর্থ আত্মসাতের দায়ে চ্যানেল আই ইউরোপের দায়িত্ব থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি বিশাল সংবাদ-বিশ্লেষক। সব বিষয়ে পন্ডিত্য দেখান।’ সুয়েবকে ‘পাগল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুয়েবের আসলে কোনো ভিত্তি নেই। তিনি না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ, না বামপন্থী। কখন কী বলেন আর কী করেন তা তিনি নিজেও জানেন না। ফেসবুক-ইউটিউবে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে এবং লাইক-শেয়ার ও কমেন্ট পাওয়ার আশায় প্রতিনিয়ত পাগলের প্রলাপ বকে যান। এদের আসলে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। এদের পাত্তা দেওয়া মানে জাতে তুলে দেওয়া। চ্যানেল আইয়ের ইউরোপ অফিসে সুয়েব কাজ করতেন ছোট্ট একটি কক্ষে। সেখানে টক শোর নামে বিভিন্নজনকে ডেকে নিয়ে অর্থ আদায় ও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিতেন সুয়েব।

পিনাকী ভট্টাচার্য

বগুড়া জেলা স্কুলের প্রয়াত শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শ্যামল ভট্টাচার্যের বড় ছেলে। তার নাম হল ডা. পিনাকী ভট্টাচার্য। মায়ের নাম সুপ্রীতি ভট্টাচার্য। তিনি ঢাকায় থাকা অপূর্ব ভট্টাচার্যের ভাই এবং বগুড়ায় থাকা বোন বুলবুল ভট্টাচার্যের ভাই। পিনাকী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এর চোখ ফাঁকি দিয়ে ২০২০ সালে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে পলাশের পথে যান। তিনি গুম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়ান। পিনাকী ভট্টাচার্য তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিধান নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে ধর্মীয় উসকানি ছড়ায়। তিনি গো-হত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সনাতন ধর্মের অনুসরণকারীদের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা করেছেন। পিনাকী ভট্টাচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কে বিদ্রূপকারী এবং একাত্তরের মানবিক বিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি আইনের সমালোচনা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে আদালত অবমাননা করেছেন। পিনাকী ভট্টাচার্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন বর্জন করেছেন।


Advertisement