মায়ের মুখ থেকে শোনা শেষ কথা

মায়ের মুখ থেকে শোনা শেষ কথা

মা তুমি কই?’ মোবাইল ফোনের অন্যপ্রান্ত থেকে জবাব এলো ‘আমি আর তোমার বাবা স্কুল থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় আছি, আসছি বাবা। সময়মতো বাসায় চলে আসব।’

মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে এটাই শেষ কথা ছিল টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী মাহমুদ আক্তার জলির একমাত্র ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজের।মা-বাবার হত্যার বিচার চেয়ে চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে এ কথা জানান মিরাজ। 

একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছেন। তার মা-বাবা পরিবারের লোকজন নিয়ে গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন।

মিরাজ বলেন, গত শুক্রবার বাসায় সর্বশেষ দেখা হয় মা-বাবার সঙ্গে। ওই দিনই আমি আমার কলেজ হোস্টেলে চলে আসি। সর্বশেষ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে কথা হয় আম্মুর সঙ্গে। আমি আম্মুর নাম্বারে ফোন দিলে তিনি জানান রওনা হয়েছেন এবং রাস্তায় আছেন। এর কিছু সময় পরে বাবার ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তিনি বলেন, সকালে টঙ্গীর কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়ি থেকে একই গাড়িতে করে আব্বা-আম্মা স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হন। প্রতিদিনের মতো স্কুল শেষে মাকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা রাতভর সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাইনি। ভোররাতের দিকে গাছা থানা এলাকার বগারটেক ব্রিজের কাছ থেকে গাড়ির ভেতর চালকের আসনে আব্বা ও পাশের সিটে আম্মুর লাশ পাওয়া যায়। সেখান থেকে প্রথমে তাদের স্থানীয় তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত শিক্ষিকা জলির বোন জেসমিনের দাবি- এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মৃত্যুর আগে হয়তো বিষ জাতীয় কিছু খাওয়ানো হয়েছে। আর দুজনের গলায় দাগ দেখে বুঝা যায়, পেছন থেকে কেউ শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার দাবি জানাই। 

ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগল প্রায় জিয়াউর রহমান মামুনের মা বলেন, শুনেছি জিয়াউর চাকরি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমার ছেলেকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জানালে তো চাকরি ছেড়ে দিত। তাহলে তো আর তাকে মরতে হতো না। আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোরের দিকে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীর বগারটেক এলাকার জয়বাংলা সড়কের পাশে একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতি টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান মামুন ও তার স্ত্রী আমজাদ আলী স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা জলি আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে গাছা থানা পুলিশ। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন নিহতদের স্বজনরা। 

নিহত প্রধান শিক্ষক ড্রাইভিং সিটে বসা ছিলেন। তার হাতটিও গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে ছিল। তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, গয়না ও টাকা পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে রহস্য ঘেরা এ শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমাদের কাছে পুরো ঘটনাটিই রহস্যঘেরা মনে হচ্ছে। বিষক্রিয়া থেকে তাদের মৃত্যু কিনা কিংবা পূর্বশত্রুতাবশত হত্যাকাণ্ড কিনা— এসব বিষয় নিয়ে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

0 মন্তব্যসমূহ

-------- আমাদের সকল পোস্ট বা নিউজ বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা থেকে নেয়া - প্রতিটি পোস্টের ক্রেডিট সেই পোস্টের শেষ ভাগে দেয়া আছে।