উদ্বোধনের আট মাস পরও চালু হয়নি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট কার্যক্রম। এতে আধুনিক এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। বহির্গমন ও আগমন—উভয় ক্ষেত্রেই আনুষ্ঠানিতা শেষ করতে বেশি সময় লাগছে তাঁদের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারের দুই কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে এ কার্যক্রম থেমে আছে।
গত বছরের ৩০ জুন শাহজালালে ছয়টি ই-গেট উদ্বোধন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমান ও স্থলবন্দরগুলোতে সনাতন (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করতে হচ্ছে ইমিগ্রেশন পুলিশকে। বিমানবন্দরে একজন যাত্রীর বোর্ডিং, চেক ইন, ইমিগ্রেশনসহ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক আন্তর্জাতিক গন্তব্যের ফ্লাইট সূচি থাকলে ইমিগ্রেশন কার্যক্রমে চাপ পড়ে। এসব ঝক্কি এড়াতে ই-গেট বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শাহজালালে বর্তমানে প্রতিদিন ২০ থেকে ২১ হাজার যাত্রী আসা–যাওয়া করেন।
ই–গেট কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর এবং পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন এ সংস্থা দুটির সমন্বয়হীনতার কারণে ই–গেট কার্যক্রম থেমে আছে। এমনকি প্রকল্পের অধীনে দেশের অন্য বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে ই-গেট স্থাপনের কার্যক্রমও তেমন গতি পাচ্ছে না।
তবে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, ই-গেট চালু করতে ৩৮ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আরও চারজনকে এ–সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে পাঠানো হবে। এ জন্য ১ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, ই-গেট কার্যক্রম চালু রাখার দায়িত্ব এসবির। তারা বিলম্ব করছে। আর এসবির কর্মকর্তারা বলছেন, ই-গেট চালু রাখতে যে সার্ভারে প্রবেশ করা প্রয়োজন, সেটির লিংক তাঁরা পাচ্ছেন না।
সারা দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে ই-গেট স্থাপন করা হচ্ছে ‘ই-পাসপোর্ট অ্যান্ড অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের মাধ্যমে। এ প্রকল্পে যুক্ত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে ইমিগ্রেশন পুলিশ ও পাসপোর্ট একই কর্তৃপক্ষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে দুটি ভিন্ন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। এতে এখানে জটিলতা বেশি।’
২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উদ্বোধন করা হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছেন প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ২৬ লাখ ২২ হাজার ৩০০ জন ই-পাসপোর্ট পেয়েছেন।
যা আছে ই-গেটে
বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় ইমিগ্রেশনের সময় ই-পাসপোর্টধারী যাত্রীদের মুহূর্তেই শনাক্ত করবে ই-গেট। ই-পাসপোর্টের চিপ ও অ্যানটেনায় ব্যক্তির ছবি, আঙুলের ছাপসহ বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষিত থাকে। ই-গেটে পাসপোর্ট স্ক্যান করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফটক খুলে যাবে। এরপর ক্যামেরা যাত্রীকে শনাক্ত করবে। ই–গেটের অন্যান্য সেবার মধ্যে আছে ই-ভিসা শনাক্তকরণ। এ জন্য আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নেটওয়ার্কিংয়ে সঙ্গে সংযোগ (কানেকটিভিটি) দরকার। এটিও প্রক্রিয়াধীন। মার্চের মধ্যে এটি হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দুই কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা
পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ইমিগ্রেশন) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্ভারের লিংক দেওয়া হচ্ছে না। এই লিংক সকালে দিলে, বিকেল থেকেই আমরা কাজ করতে পারব।’ তিনি বলেন, পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। এখানে সমন্বয়হীনতার কোনো ঘাটতি নেই বলে তাঁর দাবি।
পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, পাসপোর্টের সার্ভার ও এসবির ইমিগ্রেশন পুলিশের সিস্টেমের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে মধ্যবর্তী একটি সার্ভার তৈরি করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।
ই-গেট স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাদাত হোসেন বলেন, ‘এসবি নাগরিকদের অত্যন্ত গোপনীয়, যেমন চোখের আইরিশ, আঙুলের ছাপ, স্বাক্ষরসহ অতিরিক্ত কিছু তথ্য চাচ্ছে। সরকার এসব তথ্য আর কাউকে দিতে বলেনি।’ তিনি আরও বলেন, মধ্যবর্তী একটা সার্ভার থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস লাগতে পারে। তবে এর লিংকের সঙ্গে ই-গেট কার্যক্রম চালু রাখার যোগসূত্র কম। এসবি কেন ই-গেট চালাচ্ছে না, তা তাঁর অজানা।
সূত্র - প্রথমআলো
0 মন্তব্যসমূহ