রাজধানীর ধানমন্ডিতে আবু মহসিন খান (৫০) নামে এক ব্যবসায়ী ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডের একটি বাড়ির লেভেল-৫ এর একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যবসায়ী চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর।
এ সময় আবু মহসিন নিজে পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে গুলি চালান। লাইভের এসে তিনি বারবার পরিবার আত্মীয়-স্বজনদের কাছে প্রতারিত হওয়ার কথা বলেছেন। প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি।
আমি মহসিন । ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো এক সময়ে আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছুই নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো, মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, সেটা শেয়ার করলে হয় তো সবাই জানতে পারবে, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবে।
গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে, মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। কষ্ট লেগেছে। আজকে আমার আরেকজন খালা মারা গিয়েছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তার তিনটা ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন–কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলব, এই খালা অনেকটা লাকি।
আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে।আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে, এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি।
ছেলেমেয়ে স্ত্রী যাদের জন্য যাই কিছু আমরা করি। আমরা সব কিছু করি সন্তান এবং ফ্যামিলির জন্য। আপনি যদি একশ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন, তার টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তাহলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়।
গত করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বোঝেন। যাদের জন্য আমি বেশি করছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে।
যারা দেখছেন, এটাই হয়তো আপনার সাথে আমার শেষ দেখা। সবাই ভালো থাকবেন। আমি যেটা দিয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছি। সেটা লাইসেন্স করা পিস্তল। আমি এই মুহূর্তে এখন চলে যাবো। আত্মীয়-স্বজন যারা ছাড়ো, আমাকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে যে কবরস্থান হয়েছে, আমাকে সেখানে দাফন করো। এটাই আমার জন্য ভালো হবে।কারণ প্রত্যেকটা লোক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার বাবা-মা, ভাইয়েরা।
0 মন্তব্যসমূহ