বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলছে। তবুও হাসপাতালগুলো নতুন নতুন রোগীতে পূর্ণ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার নতুন ধরণের কথা বলছে। যেগুলো আগের ধরণ থেকে মারাত্মক। এখন প্রশ্ন হলো কবে বিশ্ব মুক্তি পাবে করোনা থেকে? এটি কি কখনো পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে?
করোনা ভাইরাসের আগেও অনেক মহামারি এসেছিল পৃথিবীতে। গত একশ বছরেই প্রায় ডজন খানেক মহামারির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে বিশ্বকে। আগের মহামারিগুলো কিভাবে কখন এসেছিল? আর এগুলো নিশ্চিহ্নও হয়েছিল কিভাবে?
স্প্যানিশ ফ্লু
স্প্যানিশ ফ্লুর আবির্ভাব পৃথিবীতে কিভাবে এসেছিল তা অজানা। এটিও ছিল একটি ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। আমেরিকার কানসাস শহরে এটি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লুর সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয় মানুষ। রোগটি বেশ ভয়াবহ ছিল। একজন মানুষ সুস্থ ও ফুরফুরে মন নিয়ে ঘুম থেকে ওঠার ২৪ ঘণ্টা পর মারা যাওয়ার ঘটনাও অনেক ঘটেছিল। স্প্যানিশ ফ্লুর কোনো কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন বের হয়নি। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এরপর এটি দুর্বল হয়ে গিয়ে আপনাআপনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। স্প্যানিশ ফ্লুতে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই মারা গিয়েছিল প্রায় সাত লাখ মানুষ।
পোলিও
পোলিও ছিল মায়েদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। কারণ এই ভাইরাসে অনেক শিশু মারা গেছে। ১৮৯৪ সালে এটি প্রথম শনাক্ত হলেও ১৯৪০ সালের দিকে মহামারিতে রূপ নেয়। পোলিওতে আক্রান্ত হলে মানুষ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে যেত। মহামারিতে রূপ নেওয়ার পর ওই সময় স্কুলসহ অনেক কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবশেষে ১৯৫৫ সালে বের হয় ভ্যাকসিন। এরপর ধীরে ধীরে পোলিও আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমে যায়।
সার্স
সার্স ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীন। ২০০২ সালে এটি প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর পৃথিবীর ২৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কোভিড-১৯ করোনা যে গোত্রের ভাইরাস সার্সও ঠিক একই গোত্রের। সার্সে পুরো পৃথিবীতে প্রায় আট হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। মারা যায় ৯১০ জন। ওই সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় সার্স বেশি ছড়াতে পারেনি। তবে এটি সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।
সোয়াইন ফ্লু
সোয়াইন ফ্লু প্রথম শনাক্ত হয় ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। ওই সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন বারাক ওবামা। তিনি শিশুদের স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন কম জরুরি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাছাড়া শিশুদের চলাচলে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সোয়াইন ফ্লুতে প্রায় তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। মারা যায় ১২ হাজার ৪৬৯ জন। ওই সময় করোনার মতো মানুষ হাসপাতালগুলোতে আতঙ্কে ভিড় জমাতো। সোয়াইন ফ্লু কি ধরনের রোগ এটি বুঝতে পেরে ২০০৯ সালেই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় এবং কার্যকর ভ্যাকসিনের কারণে ২০১০ সালেই এটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
ইবোলা
ইবোলা শনাক্ত হয় পশ্চিম আফ্রিকায়। এটি মহামারিতে রূপ নেয় ২০১৪ সালে। এর তাণ্ডব চলে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। ইবোলা ছিল ভয়ানক রোগ। পশ্চিম আফ্রিকায় প্রায় ২৯ হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ১১ হাজার ৩১০ জন। ইবোলা বাতাসে ছড়াতো না।এই রোগে প্রতি তিনজনে একজন মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাইরাসটির সংস্পর্শে আসলে এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল। ইবোলার কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন বের হয়নি। কিন্তু মানুষের সচেতনতার কারণে এই রোগ আস্তে আস্তে বিদায় নেয়।
0 মন্তব্যসমূহ