রেললাইনের দুই পাশে অস্থায়ী বাজার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট

রেললাইনের দুই পাশে অস্থায়ী বাজার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটে
ছবি - দৈনিক ইত্তেফাক 

শহরের ১ নম্বর রেলগেট ফলপট্টি এলাকা থেকে ২ নম্বর রেলগেট পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে অস্থায়ী বাজার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটের কারণে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। থাকে চরম ঝুঁকি। তার জ্বলন্ত প্রমাণ গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে ঘটে যাওয়া রক্তক্ষয়ী দুর্ঘটনা। ঐ দিন অতিরিক্ত যানজটে রেললাইনের ওপর একটি বাস থেমে ছিল। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ স্টেশনগামী চলন্ত ট্রেন ঐ বাসটিকে দুমড়ে-মুচড়ে নিয়ে যায়। ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। প্রাণ হারায় চার জন এবং আহত হয় অন্তত ১০ জন।

দেখা গেছে, রেললাইনের দুই পাশে অস্থায়ী বাজার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটের কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরু হয়ে গেছে। সেই কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, যা চলে গেছে রেলক্রসিং পর্যন্ত। এদিকে, নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণে এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

সরজমিনে ১ নম্বর রেলগেট এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, এখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড, ট্রেন স্টেশন, ফলপট্টি, পাইকারি বাজার, নিত্যপণ্যের বাজার, একটি কলেজ ও একটি বিদ্যালয়। বাসস্ট্যান্ড ঘেঁষে লঞ্চঘাট, মাছের বাজার, বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানা এবং একটি বড় মার্কেট। রয়েছে সদর মডেল থানাও। তাই এখানে প্রতিনিয়তই থাকে মানুষের ঢল। ঘটে চলেছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এলাকার স্থানীয় কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অসাধু কিছু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কের বেশির ভাগ অংশ দখলে নিয়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ শতাধিক দোকানপাট। এমনকি রাস্তার এক পাশ দখল করে ব্যবহার করা হয় বাসস্ট্যান্ড হিসেবে। এতে ১২ থেকে ১৪ ফুটের মতো রাস্তা অবশিষ্ট থাকে হাজারও ট্রাক, গাড়ি, বাস ও রিকশা চলাচলের জন্য। এখান দিয়ে ৬০-৭০ গজ রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগে ২০-৩০ মিনিট পর্যন্ত। এদিকে, নগরীর ২ নম্বর রেলগেট এলাকা থেকে শুরু করে ১ নম্বর গেট পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে বসে অসংখ্য দোকান। রয়েছে ফল, সবজি, সিরামিকসহ নানা পণ্যের দোকান। এদের উচ্ছেদ করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই আবারও বহাল তবিয়তে পসরা সাজিয়ে বসে তারা।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ট্রেন-বাস দুর্ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘ঐ রাইতেও এমন যানজট আছিলো। কালীর বাজারের দিক থেকে আসে আনন্দ পরিবহনের বাস। রেললাইনের ওপর ওঠার পরপরই সামনের বেরিয়ার নামাইয়া দেয়। সামনের দিকেও জ্যাম থাকার কারণে বাস সামনে যাইতে পারে নাই। পিছনে থাকা রিকশা গাড়িও সামনের দিকে আইসা জ্যাম লাগায় দিসিলো, তাই বাসটা পিছেও লইতে পারছিলো না। হটাৎ করে ট্রেনের আওয়াজ শুনলাম আর দেখলাম, বাসটারে ধাক্কা দিয়া অনেক দূর পর্যন্ত লইয়া গেলো।’ রেললাইনের পাশেই থাকা এক দোকান মালিক জানান, ‘এখানকার ড্রাইভারদের ধৈর্য কম। ট্রেন আসার সময় বেরিয়ার নামাতে গেলে সহজে নামানো যায় না, কোন না কোন গাড়ি বেকায়দায় ঢুকবেই। মানুষও ট্রেন আসার সময় উদাসীনভাবে চলাফেরা করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেন আসার বার্তা পেয়ে গেটম্যান বেরিয়ার ফেলার চেষ্টা করছিলেন।

এর আগেই বাসটি তাড়াহুড়ো করে অন্যদিকে যেতে চাচ্ছিল। তবে সেই দিকের বেরিয়ার আগে থেকেই ফেলা ছিল ও জ্যামও লেগেছিল। তাই বাসটি অন্যদিকে যেতে পারেনি ও পিছে জ্যাম থাকার কারণে পিছেও যেতে পারে নাই। নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনে প্রবেশের রুটটি অনেক বাঁকা। দূর থেকে ট্রেন দেখা যায় না।’ নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবুবক্কর বলেন, রেললাইনের দুই পাশের দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের অ্যাডমিন কামরুল বেগ জানান, ‘আমাদের ট্রাফিক পুলিশের সদস্য সংখ্যা নারায়ণগঞ্জের আয়তন অনুযায়ী অনেক কম। তার পরেও আমরা দিন-রাত আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে। এখন যদি নগরীর মানুষজনই ঠিকমতো ট্রাফিক আইন মেনে না চলে, সে ক্ষেত্রে আমাদের সব কষ্ট বৃথা যায়। তাই আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে অনুরোধ করব যাতে সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলেন। এতে করে দুর্ঘটনাও অনেকটা কমে যাবে। রেল-বাস দুর্ঘটনার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিবেন দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী, কি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আশাকরি, সব তথ্য উঠে আসবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সেই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

0 মন্তব্যসমূহ

-------- আমাদের সকল পোস্ট বা নিউজ বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা থেকে নেয়া - প্রতিটি পোস্টের ক্রেডিট সেই পোস্টের শেষ ভাগে দেয়া আছে।