নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের বিভক্তি এখন অনেকটাই স্পষ্ট। শামীম ওসমান এত দিন আকারে-ইঙ্গিতে নৌকার পক্ষে আছেন বলা হলেও শনিবার (৮ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘শামীম ওসমান গডফাদার। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার জনগণের না, তিনি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তিই শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে নন এবং কোনো অবস্থায় অপরিহার্যও নন। নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেলে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী শনিবার সকালে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ও বিকালে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের ৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ আশপাশের এলাকায় প্রচারণা চালান। সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকার পক্ষে বন্দরে প্রচারণাকালে শামীম ওসমানকে গডফাদার আখ্যায়িত করে বলেন, তৈমূর আলম খন্দকার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী। উনি বিএনপির প্রার্থী নন, স্বতন্ত্র প্রার্থীও নন। তৈমূর আলম শুক্রবার বন্দরে সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টির চার জন চেয়ারম্যানকে নিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। এতেই সারা নারায়ণগঞ্জে যে গুঞ্জন ছিল ‘তৈমূর আলম খন্দকার গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যান্ডিডেট’ তা প্রমাণ হয়েছে।’
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, নৌকার প্রার্থী আমার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আবোল-তাবোল বকছেন। আমি কারো পায়ে হাঁটি না। তাকে (আইভী) নাকি কেউ সাপোর্ট দেয় না, এখানে আমি কী করব। তাদের এমপি, দলের নেতাকর্মীরা যদি তাকে সাপোর্ট না দেয় সেটা আমার করার কিছু নেই।
এদিকে শনিবার ছাত্রলীগের নারায়নগঞ্জ মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রলীগ শুধু মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি উল্লেখ করলেও সিটি নির্বাচনে মহানগর ছাত্রলীগ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় কমিটি বিলুপ্তি করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। যদিও কয়েক দিন যাবত মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ‘নৌকা নিয়ে যারা এমপি হয়েছেন তারা নৌকার পক্ষে কাজ না করলে তা নিজের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে।’ বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ ফজলে শামস্ পরশ নৌকার পক্ষে প্রচারণাকালে বলেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নৌকার বিজয়ের যেমন বিকল্প নাই, তেমনি সেলিনা হায়াৎ আইভীর কোনো বিকল্প নাই।’
এসময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হোসেন খান নিখিল, জেলা যুবলীগ সভাপতি শাহদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনুসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে সেলিনা হায়াৎ আইভী শামীম ওসমানকে গডফাদার বলার পর তার অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। দুপুরে নাসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা প্রেসক্লাব ভবনে অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এতে আব্দুর রহমান ছাড়াও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, এস এম কামাল, বি এম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।
আইভির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আইভীর সাহসিকতার কারণে নগরবাসী তাকে গ্রহণ করেছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইভী আপসহীন। নৌকা মার্কায় জয়লাভ করে এখন নৌকার বিরোধিতা করছে এমন এমপির তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতীয় পার্টির এমপি প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় এমপি হয়েছেন। প্রয়োজনে আমরা আলোচনা করে জোটগত অবস্থান পরিবর্তন করব। তবে দলে কোনো বিভক্তি নেই। নারায়ণগঞ্জের সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ।
প্রসঙ্গত, আগামী ১৬ জানুয়ারি নাসিকের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৭টি ওয়ার্ডে ১৪৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৪ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে শামীম-আইভীর বিরোধ আবারও প্রকাশ্যে আসায় মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিব্রত বোধ করছেন।
0 মন্তব্যসমূহ