নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করতে দলের সব নেতাকমীর্কে মাঠে নামতে বলেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সরাসরি নারায়ণগঞ্জ না আসলেও দূর থেকে টেলিফোন ও অন্যান্য মাধ্যমে নেতাকর্মীদের তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর বিভাজন ভাঙতে হার্ড লাইনে রয়েছে। গত বুধবার রাতে নাসিকের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর নির্বাচনি পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এ বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘স্বয়ং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত নির্বাচনি অবস্হা মনিটর করছেন। আজও নারায়ণগঞ্জ আসার সময় তিনি টেলিফোন করে আমার কাছে জানতে চান আইভীর অবস্হা কী?’ তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা কেউ দলের জন্য অপরিহার্য নই। কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির ১৫ সদস্যের উপস্হিতিতে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় তাকে দল থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কেউ অহংকার দেখাবেন না। এখনো সময় আছে বাজে চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করুন। অহংকার পতনের মূল। নেত্রী সব খবরই রাখেন।’ তিনি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতাকর্মীকে
আইভীর নৌকার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল চন্দ্র গুহ নারায়ণগঞ্জে এসে এক কর্মীসমাবেশে নৌকার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান। নাসিক নির্বাচনের দুই মেয়র প্রার্থীই গতকাল শহরে ও সিদ্ধিরগঞ্জে নির্বাচনি প্রচারণা চালান। সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়িসহ ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রার্থনাকালে মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমি কোনো দিন সন্ত্রাস করিনি বা চাঁদাবাজি করিনি। অপর দিকে শহরের পাইকপাড়া ও শীতলক্ষ্যা এলাকায় প্রচারণাকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, আমি নির্বাচিত হলে নারায়ণগঞ্জকে ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন শহরে পরিণত করব। বিএনপির সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ বলে তিনি দাবি করেন। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নাসিক নির্বাচনকে নিয়ে এখন অনেকটাই হার্ড লাইনে বলা চলে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘হয় নৌকার পক্ষে নামুন অন্যথায় দল ছেড়ে চলে যান।’ একই নির্দেশ দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সব আলোচনাই শামীম ওসমানের নীরবতা নিয়ে আকারে ইঙ্গিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখছেন। যদিও আওয়ামী লীগ প্রার্থী আইভী নিজেই বলেছেন, শামীম ওসমান এমপি তাই তিনি প্রকাশ্যে মাঠে নামতে পারছেন না। তবে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শামীম ওসমান প্রকাশ্যে না নামলেও তার অনুসারীদের প্রায় সকলেই নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার জালকুড়ি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালান মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক পুরানো। আমি সিটি করপোরেশনে ১০ বছর যাবৎ কাজ করছি। আমি কোনো দিনও শহরে সন্ত্রাস করিনি, চাঁদাবাজি করিনি, মানুষের ক্ষতি করিনি। আমি যা কিছু করেছি, মানুষের কল্যাণে করেছি, নগরবাসীর কল্যাণে করেছি। আমি চাই মানুষ আমাকে আগামী পাঁচ বছর সেবা দেওয়ার সুযোগ দিক। আমি যেন তাদের খেদমত করতে পারি। তিনি আরো বলেন, আপনারা দেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অনেক টাকা দিয়েছেন, বিভিন্ন দাতা সংস্হাও আমাকে টাকা দিয়েছে। সে টাকা দিয়ে আমরা প্রচুর কাজ করেছি। আমি চাই এটা অব্যাহত থাকুক।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার পাইকপাড়া, শীতলক্ষ্যাসহ ১৭ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনি প্রচারণাকালে বলেন, আমি জনগণের চাহিদার কারণে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমার মনে হচ্ছে জনগণ তাদের প্রার্থী খুঁজে পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জকে আমরা ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন সিটি করব। নারায়ণগঞ্জ শহর হবে সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহর। এর জন্য নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি খালি জায়গায় গাছ রোপণ করা হবে। ছাদবাগানের মাধ্যমে মানুষের খাবারেরও জোগান হবে। ছাদবাগান যারা করবে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে উত্সাহিত করা হবে।
আইভীর নানা অভিযোগের ব্যাপারে তৈমূর বলেন, কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি বলেন। আমি জনগণের প্রার্থী। আমাকে সর্বস্তরের জনগণের কাছে যেতে হবে। আপনারা যদি এভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন সরকারি দলের কথায়, তাহলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। ট্যাক্স নিয়ে তিনি মিথ্যাচার করছেন—আইভীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তৈমূর বলেন, আমি যা বলি কাগজে কলমে বলি। ডকুমেন্ট ছাড়া কোনো কিছু বলি না। সিটি করপোরেশনের অনেক ডকুমেন্ট আমার হাতে। এখানে যারা ট্যাক্স দেয় তারা জানে কত বেড়েছে ট্যাক্স, করোনাকালে সবকিছু কমলেও নাসিকে ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে।
আচরণবিধি প্রসঙ্গে তৈমূর বলেন, যেখানেই আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সেটা প্রতিহত করা। নয়তো আচরণবিধি লঙ্ঘন হতেই থাকবে। সরকারি দল তো আমলাদের একটা সুবিধা পায়। সেটাকে তারা যেন কাজে না লাগাতে পারে সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য আমি অনুরোধ জানাব।
নাসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকা মার্কা ও হাতি মার্কার পক্ষে বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলছে প্রচার প্রচারণা। সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকার পক্ষে ও তৈমূর আলম খন্দকার হাতির পক্ষে দিনভর তো বটেই রাতেও বিভিন্ন এলাকায় ভোট প্রার্থনা করে চলেছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে গত দুটি নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে দুই দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বেশি উত্সাহ-উদ্দীপনা, উত্সবের আমেজ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ