ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাত্রীদের বাঁচাতে উদাসীন ছিলেন মালিকপক্ষ বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)
র্যাব জানান, আগুন লাগার দশ মিনিটের মধ্যে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চের স্টাফরা ফোনে মালিককে বিষয়টি জানান। কিন্তু লঞ্চ মালিক যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য জরুরি সেবা বা কোনো সংস্থাকে দুর্ঘটনার খবর জানাননি। পরে চলন্ত ও জ্বলন্ত লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান স্টাফরা। যে কারণে দ্রুত লঞ্চটিকে তীরে ভেড়ানোর মতো কেউ ছিল না। ফলে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় কাওরান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, লঞ্চটিতে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার আগুন লাগার বিষয়টি মোবাইল ফোনে হাম জালাল শেখকে জানান। কিন্তু তিনি কোনো সংস্থাকে বা জরুরি সেবায় দুর্ঘটনার খবরটি জানাননি। পরে সকল ক্রু জ্বলন্ত এবং চলন্ত অবস্থায় লঞ্চটি রেখে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে লঞ্চটিকে ত্যাগ করে। ফলে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে।
র্যাব জানায়, মুন্সিগঞ্জের মো. হাম জালাল শেখ ১৯৮৮ সাল থেকে জাপান প্রবাসী ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি জাপান থেকে দেশে এসে একটি লঞ্চ কিনে ব্যবসায় যুক্ত হন। বর্তমানে তার মালিকানায় ৩টি লঞ্চ রয়েছে। এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ৪ জনের মালিকানায় থাকলেও তিনিই মূল মালিক এবং সমস্ত ব্যবস্থাপনা তিনি দেখভাল করতেন।
হাম জালাল শেখের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা তৈরি করতে লঞ্চটিতে গত নভেম্বরে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। যাতে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। বিলম্বে ছেড়ে গন্তব্যে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যায় বলে তার ধারণা। এ লক্ষ্যে গত নভেম্বরে লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ৭২০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়নি।
একজন সাধারণ মিস্ত্রির মাধ্যমে ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের ইঞ্জিনটি ছিল চীনের তৈরি। বর্তমানে জাপানি রিকন্ডিশন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। জাহাজের ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে এবং ইঞ্জিন পরিবর্তন পরবর্তী যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে কারিগরী পরিদর্শন, অনুমমোদন গ্রহণ করেনি। এছাড়া কোনো ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া তার লঞ্চে কর্মরত তিনজন (মাস্টার এবং ড্রাইভার) কর্মচারীর নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর থেকে পাওয়া এই জাহাজ চালনার অনুমোদন নেই।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মূখপাত্র আরও জানান, লঞ্চের মালিক যাত্রাপথের সময় কমানোর ব্যাপারে দুর্ঘটনার দিন দুপুরে লঞ্চের মাস্টার ও স্টাফদের নির্দেশনা দেন। ইঞ্জিন পরিবর্তনের পর এ পর্যন্ত তিনবার বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চটি গমন করেছে। যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না। শুধু তার কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন। তবে অধিকাংশ বয়াই যথাস্থানে ছিল না। এছাড়া লঞ্চটির ইনসুরেন্স করা ছিল না বলে তিনি জানান।
এর আগে, গত ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ঝালকাঠি পার হওয়ার পর সেটিতে আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার পর লঞ্চটির স্টাফরা এটি তীরে না ভিড়িয়ে সামনের দিকে চালাতে থাকে। এতে আগুন আরও বেড়ে যায় এবং অল্প সময়ের মধ্যে গোটা লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আগুনে পুড়ে এবং নদীতে ডুবে অন্তত ৪১ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক যাত্রী।
নিউজ দৈনিক ইত্তেফাক থেকে
0 মন্তব্যসমূহ