ঝালকাঠীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিয়ে সন্দিহান নৌমন্ত্রণালয় ও অধিনস্হ সংস্হাগুলোর কর্মকর্তারা। যদিও এখনো পর্যন্ত আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। লঞ্চটির আগুন নেভাতে নৌযানটির শ্রমিকদের তত্পরতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কাছাকাছি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলেও সেখানে তাত্ক্ষণিকভাবে খবর দেওয়া হয়নি। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রপাতি ছিল কি না এবং সেগুলো ব্যবহার কতটা করা হয়েছে—সেটিও স্পষ্ট নয়।
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চটির মালিক হাম জালাল শেখ দাবি করেছেন, লঞ্চটিতে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। দুই মাস আগে জাপানি নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করেছেন। সেটিতে অন্তত ২১টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল। তবে বিমা করা নেই বলে স্বীকার করেছেন নৌযানটির মালিক। তিনি দাবি করেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নাশকতামূলক। ইঞ্জিনে আগুন লাগলে ইঞ্জিনরুম পুড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওপরে বা আগুন সামনে যাওয়ার কথা নয়।
তিনি জানান, লঞ্চটির ইঞ্জিনরুমে তিনটি তেলের ট্যাংকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার লিটার তেল ছিল। সব আগুন নিভে যাওয়ার পরও তেল থাকার কারণে ইঞ্জিনরুমের আগুন আরো দুই ঘণ্টা জ্বলে। কিন্তু ইঞ্জিনরুমের আগুন সর্বোচ্চ দোতলা পর্যন্ত ওঠার কথা। এর ওপরে ওঠার কথা নয়। তার আশঙ্কা দোতলায় কেউ নাশকতা করায় তা ছড়িয়ে পড়েছে।
নৌমন্ত্রণালয় ও অধিনস্হ সংস্হাগুলোর কর্মকর্তাদের মতে, ইঞ্জিনরুম থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটলে এত দ্রুত দোতলা বা তিন তলার কেবিনগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার কথা নয়। নিচতলায় ইস্পাতের তৈরি ডেক ছাড়া তেমন আসবাবপত্র ছিল না। তবে সেখানে চায়ের দোকান ছিল। ইঞ্জিনরুমে প্রচুর জ্বালানি তেল ছিল। অপরদিকে দোতলায় অবস্হিত ক্যান্টিন বা চায়ের দোকানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটিও পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়তে সময় নেওয়ার কথা।
ঘটনার পরপরই লঞ্চটি পরিদর্শন করেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক। তিনি বলেন, লঞ্চটি এমনভাবে পুড়ে গেছে যে শুধু লোহার খাচা পড়ে আছে। আমরা অনেক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, আগুনের তীব্রতা এতই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, পুরো লঞ্চটি যেন গরম ইস্পাতে পরিণত হয়। বাংলাদেশ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, গভীর রাতে যখন লঞ্চটিতে আগুন ধরে তখন বাহিরের আবহাওয়ার তাপমাত্র ছিল ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি। এমন ঠান্ডার সময়ে ইঞ্জিন রুমে আগুন লাগলে কীভাবে তা দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল।
ঘটনার পরপরই নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঘটনাস্হলে উপস্হিত হন। তিনি বলেন, তাদের কাছে থাকা তথ্য মতে, লঞ্চটির ফিটনেসে কোনো সমস্যা ছিল না। এই দুর্ঘটনার কারণ জানতে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তিন দিন নৌযানে কালো পতাকা
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় আগামী তিন দিন সকল নৌযানে কালো পতাকা উত্তোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটির সভাপতি মো. শাহআলম ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান।
0 মন্তব্যসমূহ