সম্পূর্ণ এক নতুন নিয়মে আগামী রবিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। তিন ঘণ্টার পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেবে দেড়ণ্টায়। করোনার কারণে বাংলা, গণিত, ইংরেজি বিষয়ের মত আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষা হচ্ছে না। শুধুমাত্র বিভাগভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা দেবে শিক্ষার্থীরা। এরফলে শিক্ষার্থীরা মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েই জীবনের তৃতীয় বড় পাবলিক পরীক্ষা শেষ করবে। এরআগে তারা প্রথম পাবলিক পরীক্ষা প্রাথমিক সমাপনী এবং পরে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা দিয়েছিল।
শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কম সময়ে কম পরীক্ষায় এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শেষ হবে। এতে সবকিছুই শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন মনে হবে। বাংলা, গণিত, ইংরেজির পরীক্ষা না হলেও জেএসসি-জেডিডিস পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এই বিষয়গুলোর ফলাফল চূড়ান্ত করা হবে। শারীরিক শিক্ষা,স্বাস্থ্য বিজ্ঞানও খেলাধূলা এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে এনসিটিবির নির্দেশনা অনুসারে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত নম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রকে সরবরাহ করবে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বর অনলাইনে বোর্ডে পাঠাবে। এছাড়াও করোনার ধাক্কা কাটাতে পরীক্ষার হলে প্রতি বেঞ্চে বসানো হবে একজন শিক্ষার্থী। আর কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবক জমায়েতে থাকবে কঠোরতা। রাজধানীর কেন্দ্র্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
পরীক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হরেয়ছে, কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল/রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উভয় অংশের মাঝে কোনো বিরতি থাকবে না। প্রতিটি পরীক্ষার জন্য দেড় ঘণ্টা করে সময় দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ বিরতির পর রবিবার থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সবকিছু হয়ত নতুন নতুন মনে হবে। তারমতে, এবারের পরীক্ষায় সিলেবাস কম, তিন ঘণ্টার বদলে পরীক্ষা হবে দেড় ঘণ্টা। পরীক্ষার ফলাফলও ৬০ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিনের মধ্যে দেয়া হবে। সবমিলিয়ে পরীক্ষা কম, সময় কম। এ এক অন্যরকম পরিবেশ।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি বলেছিলেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ পরীক্ষা শুরু হলেও কোভিড-১৯ এর কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার যথাসময়ে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আক্রান্তের হার সহনীয় মাত্রায় উন্নীত হওয়ায় পুর্নবিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
চলতি বছরে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১৩ জন পরীক্ষার্থী। মোট ৩ হাজার ৬৭৯ টি কেন্দ্রে এবারের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মোট ২৯ হাজার ৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। সারাদেশে ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি /দাখিল/এসএসসি(ভোকেশনাল) পরীক্ষায় ১৮ লাখ ৯৯৮ জন পরীক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নেবে। অন্যদিকে ৭১০টি পরীক্ষা কেন্দ্রে মোট ৩ লাখ এক হাজার ৮৮৭ জন শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ৭৬০ টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ভোকেশনালে পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ২৪ হাজার ২২৮ জন।
২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোট পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন। এই বৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫১ টি এবং কেন্দ্র বেড়েছে ১৬৭ টি।এদিকে, চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষার ৯ টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের গ্রুপভিত্তিক বিভাগওয়ারী। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- বিজ্ঞান বিভাগে ঢাকা বোর্ডে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩১ জন , রাজশাহী বোর্ডে ৮১ হাজার ২২৪ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৫৪ হাজার ৫৮৩ জন, যশোর বোর্ডে ৩৭ হাজার ৬০১ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৩১ হাজার ৫৭ জন, বরিশাল বোর্ডে ২৫ হাজার ১১২ জন, সিলেট বোর্ডে ২১ হাজার ৬২৩ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৯ হাজার ৩৬৫ জন ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৪১ হাজার ৮৩৫ জন।
মানবিক বিভাগে- ঢাকা বোর্ডে ২ লাখ ৯৫৭ জন , রাজশাহী বোর্ডে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭২৫ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৮৯ হাজার ৩৬১ জন, যশোর বোর্ডে ১ লাখ ১৭ হাজার ১০৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬৫ হাজার ১৫৭ জন, বরিশাল বোর্ডে ৫৯ হাজার ৬৫৬ জন, সিলেট বোর্ডে ৮৯ হাজার ৯৩৩ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ১ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ জন ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭৭ হাজার ৪৮১ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে- ঢাকা বোর্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১২ জন, রাজশাহী বোর্ডে, ১১ হাজার ৬১৯ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ৮০ হাজার ৯৩০ জন,যশোর বোর্ডে ২৬ হাজার ৫৭২জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬৪ হাজার ৭১১ জন, বরিশাল বোর্ডে ২০ হাজার ২২২ জন, সিলেট বোর্ডে ৯ হাজার ৫৫৫ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৪ হাজার ৩৭৫ ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ১১ হাজার ৩৮৬ জন। বিজ্ঞান বিভাগে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ লাখ ৬ হাজার ৮৩১ জন, মানবিকে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮২ জন।
এদিকে করোনা সংক্রমণ মাথায় রেখে কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। এক্ষেত্রে প্রতি বেঞ্চে বসানো হবে একজন শিক্ষার্থী। কেন্দ্রের বাইরেও একজন শিক্ষার্থীর জন্য একজন অভিভাবক উপস্থিতি নিশ্চিতে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ৬০টি ভিজিলেন্স টিম কাজ করবে কেন্দ্রগুলোতে। চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের প্রথম কাজ হলো স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। প্রতি বেঞ্চে একজন করে পরীক্ষার্থী বসানো হবে। অভিভাবকদেরও আমরা বলেছি পরীক্ষার হলের বাইরে তারা যেন ভিড় না করে। কারণ ভিড় করলে সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেয়ার অভিজ্ঞতা পাবলিক পরীক্ষা নেয়াকে সহজ করবে।
এদিকে, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ব্যতীত জনসাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এ আদেশ আগামী রবিবার থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনগুলোতে পরীক্ষা চলাকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত এসএসসি পরীক্ষার সূচিতে দেখা গেছে, আগামী ১৪ নভেম্বর পদার্থ বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়) বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু করা হবে। এরপর ১৫ নভেম্বর সকালে বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা এবং বিকেলে হিসাব বিজ্ঞান, ১৬ নভেম্বর রসায়ন (তত্ত্বীয়), ১৮ নভেম্বর শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া (তত্ত্বীয়), ২১ নভেম্বর সকালে ভূগোল ও পরিবেশ এবং বিকেলে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, ২২ নভেম্বর উচ্চতর গণিত (তত্ত্বীয়) ও জীব বিজ্ঞান (তত্ত্বীয়), ২৩ নভেম্বর সকালে পৌরনীতি ও নাগরিকতা এবং অর্থনীতি, বিকেলে ব্যবসায় উদ্যোগ বিষয়ের পরীক্ষা হবে। সময়সূচি অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা এবং দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা, দুই শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
0 মন্তব্যসমূহ