উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও ধর্ষণ মামলায় এক আসামিকে জামিন দেওয়ার ঘটনায় রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলায় এখতিয়ারবহির্ভুত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারিক ক্ষমতা হারানো মোছা. কামরুন্নাহারকে গতবছর একবার তলব করা হয়েছিল। গতবছরের ১২ মার্চ তাকে তলব করা হয়। সেসময় তাকে ২ এপ্রিল আপিল বিভাগে হাজির হয়ে আসামিকে জামিন দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
যে মামলায় জামিন নিয়ে কামরুন্নাহারকে তলব করা হয়েছিল, সেই ফৌজদারি আবেদনটি সোমবার ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম সিকদার’ শিরোনামে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১ নম্বরে ছিল। এ নিয়ে বিচারক কামরুন্নাহারের বিষয়ে আরেক আদেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তবে আদেশটি জনসন্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আদেশের বিষয়টি জানতে চাইলে আপিল বিভাগ বলেছেন, ‘এটা এখন আপনারা জানবেন না। অর্ডার পাসড, এখন বলব না।’
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির ভার্চুয়াল বেঞ্চ থেকে সোমবার এ আদেশ দেওয়া হয়।
মোছা. কামরুন্নাহার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক হিসেবে গত ১১ নভেম্বর রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার রায় দেন। রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দেওয়া হয়। তবে খালাস নিয়ে যতটা না আলোচনা, তার চেয়ে বেশি সমালোচনা দেখা দেয় রায়ে বিচারক কামরুন্নাহারের পর্যবেক্ষণ নিয়ে।
তিনি পর্যবেক্ষণে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়। বিচারকের এমন পর্যবেক্ষণ নিয়ে সেদিন থেকেই সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এ ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের প্রস্তাব অনুযায়ী, সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে সোমবার কামরুন্নাহারকে নিয়ে আগের একটি মামালায় আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
মামলার বিবরণে জানা যায়, রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন বাংলার সাবেক প্রোগ্রাম প্রডিউসার আসলাম শিকদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মামলা করা হয়। ওইদিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২০১৯ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আসলামের জামিন স্থগিত করেন। তবে চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত থাকার পরও গতবছরের ২ মার্চ আসামি আসলামকে জামিন দিয়ে দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক কামরুন্নাহার। এরপর ১২ মার্চ কামরুন্নাহারকে তলব করেন আপিল বিভাগ।
সোমবার ‘রাষ্ট্র বনাম আসলাম শিকদার’ শিরোনামে সেই মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে। তালিকার ১ নম্বরে ছিল এটি। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি এ মুহূর্তে নেই বলে জানান। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের কাছে সব আছে।’
এরপর আদালত কিছু সময়ের জন্য বিরতিতে যান। ফিরে এসে প্রধান বিচরাপতি বলেন, ‘আদেশ দেওয়া হয়েছে।’ কী আদেশ হয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন জানতে চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘লিখিত আদেশে পাবেন।’
এরপর আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বললেন, না এটা এখন আপনারা জানবেন না। বললেন, অর্ডার পাসড, এখন বলব না।’
এদিকে গতবছরের ১৪ অক্টোবর বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে আসলাম শিকদার খালাস পান। তখন ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে গত ২০ জানুয়ারি এ মামলার নথি তলব করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসলাম শিকদারকে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
সূত্র - সমকাল
0 মন্তব্যসমূহ