সোমবার (৪ অক্টোবর) থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা বাবদ চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি জেলে পরিবার ২০ কেজি করে চাল পাবেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৭ জেলার ১৫১টি উপজেলায় এ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মা ইলিশ রক্ষায় দেশের ৩৮টি জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে প্রশাসন। রবিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য দফতর, বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সমন্বিতভাবে এ অভিযান পরিচালনা করবে।
অভিযান বাস্তবায়নকালে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বাগেরহাট জেলার সব নদ-নদী, মোহনা ও সাগরে ইলিশসহ সব রকমের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, জামালপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, কুষ্টিয়া ও নড়াইল জেলার নদ-নদীতে শুধু ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট-১৯৫০’-এর অধীন প্রণীত ‘প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ রুলস-১৯৮৫’ অনুযায়ী এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
অভিযান চলাকালে ৩৮ জেলার আকাশ, নদী ও সমুদ্রপথে বিশেষ টহল জোরদার করবে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় আইন না মানলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইলিশ ধরা বন্ধকালে যেন পাশের দেশের জেলেরা অবৈধ মৎস্য আহরণ করতে না পারে, সেজন্য সাগরে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী ব্যবস্থা নেবে। নৌ-িপুলিশ এ বছর নদীতে ভাসমান ফাঁড়ি পরিচালনা করবে।
এ সময় সার্বক্ষণিক একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ চালু থাকবে। রাতে টহল জোরদার করবে। নৌবাহিনী ৯টি জাহাজের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করবে। বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভারতীয় কোস্টগার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করবে, যাতে ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরতে না পারে।
এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ বরফকল বন্ধ রাখা, বাজার তদারকি এবং স্থানীয় মৎস্যজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে সচেতনতা ও প্রচারণামূলক ব্যবস্থা নেবে। মা ইলিশ সংরক্ষণে বাধা সৃষ্টি করলে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশে মৎস্য উৎপাদন বাড়ছে। ইলিশ মাছকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
মৎস্যবিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজনন সময় বিবেচনা করে এ বছর ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে আইন অমান্যকারী কমপক্ষে ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
0 মন্তব্যসমূহ