কিছুদিন ধরে যশোরে পারিবারিক কলহ, কর্মক্ষেত্রে হতাশাসহ নানা কারণে আত্মহত্যা বেড়েছে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে এ প্রবণতা বাড়ছে। গত চার মাসে জেলায় ১৮২ জন আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে এর সংখ্যা কম নয়।
চলতি সেপ্টেম্বর এর ১৫ দিনে আরও অন্তত ২০ জন আত্মহত্যা করেছে। সব মিলে গত সাড়ে ৪ মাসে জেলায় প্রায় ২০২ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হতাশাগ্রস্ত মানুষ নিজেকে হত্যার প্রবণতায় ফেলছেন। এমনিতেই করোনাকালে মানুষ নানা সংকটে দিন পার করছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ব্যবধান বাড়ছেই।
এক হিসেবে দেখা যায়, গেল মাসের ১৭ আগস্ট যশোরের শার্শা উপজেলার শুড়ারঘোপ গ্রামে মেয়ে আখি মনিকে (৬) বিষপানে হত্যার পর সুমি খাতুন (৩০) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন। তিন বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদের পর সুমি খাতুন তার শিশুকন্যা আখি মনিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এ নিয়ে সুমির মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা কাটাকাটি হতো। মা তাকে এ নিয়ে বকাঝকা করেন। এক পর্যায়ে সুমি আত্মহত্যা করেন বলে জানান স্বজনেরা।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুস সালাম সেলিম (৫৫) শহরের বাসায় আত্মহত্যা করেন। কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এর জেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম।
এদিকে স্বামীর পরকীয়া নিয়ে বিবাদের জেরে তিন বছরের মেয়ে কথাকে এক রশিতে ঝুলিয়ে হত্যার পর আরেক রশিতে আত্মহত্যা করেন মণিরামপুরের এক মা। এ ঘটনায় পুলিশ স্বামী কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে আটক করে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রূপন কুমার সরকার জানান, গত চার মাসে (মে-আগস্ট) যশোর জেলায় ফাঁস ও বিষ পানে ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১১৬ জন ফাঁস ও ৬৬ জন বিষ পানে আত্মহত্যা করেন।
আগস্ট মাসে ৪৭ জনের মধ্যে ২৬ জন ফাঁস এবং ২১ জন বিষ পানে আত্মহত্যা করেন। জুলাই মাসে ৬৮ জনের মধ্যে ৪৮ জন ফাঁস ও ২০ জন বিষ পানে আত্মহত্যা করেন। জুন মাসে আত্মঘাতী ৩১ জনের মধ্যে ১৯ জন ফাঁস ও ১২ জন বিষ পান করেন। মে মাসে আত্মঘাতী ৩৬ জনের মধ্যে ২৩ জন ফাঁস ও ১২ জন বিষ পান করেন। পারিবারিক কলহ, সামাজিক অস্থিরতা ও হতাশার জেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে তার ধারণা।
0 মন্তব্যসমূহ