প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা ১০ দিনের ব্যাপার: এহসানুল হক মিলন

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন বলেছেন: প্রশ্নপত্র ফাঁসের পক্ষে সরকারপ্রধান যেভাবে সাফাই গাইলেন তা লজ্জাজনক। এতে বুঝা যায় শুধু শিক্ষামন্ত্রী নয়, বরং সরকার সম্মিলিতভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া লাগাতার এই প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা মাত্র ১০ দিনের ব্যাপার।
এহসানুল হক মিলন বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ৯০ দশকের শেষের দিকে বিষফোঁড়া হয়ে ওঠা নকল শুন্যের কোটায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তিনি সফল এবং সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন।
সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে সমালোচনায় থাকা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইটালি সফর শেষে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন: মন্ত্রী আর সচিব গিয়ে তো প্রশ্নফাঁস করেনি, তাদের কেন সরে যেতে হবে, যারা করেছে তাদের ধরিয়ে দিন, ব্যবস্থা নেব। প্রশ্নফাঁস হচ্ছে ২০ মিনিট বা এক ঘন্টা আগে, এতো ট্যালেন্ট কোন ছাত্র আছে যে এই সময়ের মধ্যে পড়া মুখস্ত করে লিখবে। প্রশ্নফাঁস নতুন কিছু না, যুগযুগ ধরে হচ্ছে। কখনও প্রচার হয় কখনও হয় না। আগামীতে এমসিকিউ বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মিলন বলেন: বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে আমি হতবাক, পুরো দেশবাসীও। সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি কোনভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের দায় এড়াতে পারেন না। তার এই বক্তব্যে অপরাধীরা আরো শক্তিশালী এবং সক্রিয় হয়ে উঠবে।
‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে একইভাবে নকলের মহামারী অবস্থায় রেখে গেছে। আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন শুনেছি, বছর খানেক আগেও নকল করতে না দেওয়ায় সরকারপন্থি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে সরকারি নকল প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের লাঞ্ছিত করছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়ন করে আমরা নকলকে শুন্যের কোটায় নিয়ে এসেছি’, বলেন এহসানুল হক মিলন।তিনি বলেন: এই যে নিজেদের ব্যর্থতা অস্বীকার করার প্রবণতা এটাই মূল সমস্যা। পরিস্থিতি স্বীকার করে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। আমি দিনের পর দিন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে বেড়িয়েছি। ছদ্মবেশে গিয়ে দেখেছি কীভাবে শিক্ষকরা নকল সরবরাহ করছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের হাতেনাতে ধরেছি, কঠোর শাস্তি দিয়েছি। এভাবেই একপর্যায়ে নকলের নাম নেওয়াটাই শিক্ষার্থীদের জন্য আতঙ্কের করে দিয়েছি। আর এখন তার উল্টোটা হচ্ছে!
‘এখনকার শিক্ষামন্ত্রী লোক দেখানোর জন্য মিডিয়া এবং ক্যামেরা নিয়ে পরীক্ষার হলে যান। আর তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর যে কোন প্রেশার নেই তা আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। অথচ সদিচ্ছা থাকলে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা সম্ভব। এজন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে- প্রশ্নফাঁস বন্ধে সদিচ্ছা থাকতে হবে। এটা বর্তমান সরকারের নেই’, বলেন নকল নির্মূলে সফল সাবেক এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
সাবেক এই শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন: সরকার প্রশ্নফাঁসে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের ফাঁসকারী চক্রকে ধরিয়ে দিতে বলেছেন। এটা দায় এড়ানোর মানসিকতা। অপরাধীদের ধরিয়ে দেওয়া সাংবাদিকদের কাজ নয়। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজ। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দেশকে মেধাশূন্য করছে।
সরকার তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে ভয় উল্লেখ করে এহসানুল হক মিলন বলেন: তারেক রহমান নিজের যোগ্যতাবলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন। তার নেতৃত্বকে সরকার ভয় পায় বলেই আওয়ামী লীগ তাকে নিয়ে শঙ্কিত। এ কারণে তারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিষেদাগার এবং লাগাতার মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।

0 মন্তব্যসমূহ

-------- আমাদের সকল পোস্ট বা নিউজ বাংলাদেশের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা থেকে নেয়া - প্রতিটি পোস্টের ক্রেডিট সেই পোস্টের শেষ ভাগে দেয়া আছে।